।। নিজস্ব প্রতিবেদক,২১ অক্টোবর ২০২৫।।
বান্দরবানে বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীরা। এসময় হোটেল জেলা শহরের হাফেজঘোনায় দি-মোর হোটেল ঘেরাও করে স্থানীয় জনসাধারণ। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, তিন জন কোরিয়ান, এক জন আমেরিকান নাগরিক’সহ ১২ জন বিদেশি নাগরিক চেক ইন রোববার হোটেলে দি-মোরে রুম বুকিং নেয়। সোমবার হোটেল কনফারেন্স রুমে একটি সেমিনারও করে তারা। অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় পাহাড়ীদের ধর্মান্তরের অভিযোগ পেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মী দি-মোর হোটেল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। এসময় প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপরতায় ঘেরাও ছেড়ে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান অভিযোগ করে বলেন, একটি চক্র ভারতের কিছু অঙ্গরাজ্য ও বাংলাদেশের কুমিল্লা, ফেনী, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার এলাকাগুলো নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের অংশ হিসেবে হোটেল ডি-মোরে অবস্থান করা আমেরিকান ও কোরিয়ান নাগরিকরা স্থানীয় পাহাড়িদের টাকা দিয়ে ধর্মান্তর করাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সমাজের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি করছে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি উল্লেখ করে আরও বলেন, স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক কীভাবে এ ধরনের বিদেশি নাগরিকদের বান্দরবানে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া জরুরি। ভারতের বিশেষ বাহিনী, মোসাদ ও সিআইএর রাষ্ট্র বিরোধী এমন পরিকল্পনা রোধ করা না হলে পাহাড়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে গোটা তিন পার্বত্য জেলা অচল করে দেওয়া হবে। ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের শনাক্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
হোটেল ডি-মোর এর ম্যানেজার হ্যাপী মারমা বলেন, গত রোববার হোটেলে ১২ জন বিদেশি নাগরিক চেক ইন করে। সোমবার হোটেল কনফারেন্স রুমে একটি সেমিনার করে তারা, বিদেশিরা তাকে সেমিনার করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি ছিল বলে মিথ্যা তথ্য দেন। সব বিদেশি নাগরিক যেভাবে হোটেলে চেক ইন করে, এরাও সেভাবেই অবস্থান নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন,
বিদেশিদের বান্দরবান ভ্রমণের অনুমতিপত্রে ‘শুধুমাত্র পর্যটক হিসেবে ভ্রমণের উদ্দেশ্য উল্লেখ ছিল। তাদের কোনো সভা, সেমিনার বা ধর্মীয় কর্মসূচি পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কোনো বিদেশি নাগরিক বান্দরবানে ভ্রমণ করতে চাইলে সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন সেটি ডিএসবিতে (ডিস্ট্রিক্ট স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পাঠায়। ডিএসবির পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করা হয়। তিনি আরও বলেন, যদি কোনো বিদেশি বান্দরবানে এসে সভা, সেমিনার বা অনুরূপ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান, তাহলে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে করতে হয়। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতির কপি জেলা প্রশাসনে পাঠানো হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের একজন কর্মকর্তা তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে উপস্থিত থাকেন এবং সেই কার্যক্রমের বিস্তারিত রিপোর্ট সরকারের কাছে পাঠানো হয়। বর্তমানে বান্দরবানে অবস্থানরত বিদেশি পর্যটকরা শুধু ঘোরাঘুরি ও ভ্রমণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তাদের কোনো সভা বা ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। অভিযোগে উল্লিখিত ৩ জন কোরিয়ান এবং ১ জন আমেরিকান নাগরিক পর্যটক হিসেবে বান্দরবানে এসেছেন। তাদের সঙ্গে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও যুক্ত রয়েছে।
বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরের অভিযোগে বান্দরবানে নাগরিক পরিষদের বিক্ষোভ
Previous Articleনাইক্ষ্যংছড়ি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিম গ্রেফতার
Related Posts
Add A Comment
