।।এম.এ শাহরিয়ার।।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে ভয়ঙ্কর রোমাঞ্চকর পর্যটন হচ্ছে দেবতাখুম। এখানে সুনসান নীরবতা, পাখীর কলরব, সান বাঁধানো পাথরের সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে স্বচ্ছ জলধারা, খালের পানির স্রোতে পাথরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের নকশা আর খাঁজ দেবতাখুমের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে আরও কয়েকগুন। দেবতাকুমের পথে পথে যেন সব রহস্যের হাতছানি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বান্দরবান জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শিখরে রয়েছে রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম পর্যটন স্পট। এটি মূলত তারাছা খালের একটি অংশ। দুপাশ সবুজ বাঁশ গাছের পাহাড়ে ঘেরা এবং গভীর জলের পাথুরে এলাকা। সহজে ঘুরে আসা যায় বলেই জেলার অমিয়খুম, নাফাখুম, সাতভাইখুম (জলাধার) গুলোর মধ্যে দেবতাকুম পর্যটন স্পট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
এদিকে দুপাশের সুউচ্চ পাথুরে পাহাড়ের কারণে দেবতাকুমের ভিতরে সরাসরি সূর্যের আলো পৌঁছায়না, তাই দেবতাখুমের ভিতরে যতই যাই, ততই শীতল অনুভূত হয়। ঝর্নার পানির শব্দ শান্ত কোলাহল মুক্ত দেবতাখুমের ভিতরে বাঁশের ভেলা বা ছোট্ট নৌকা প্রবেশের মুহুর্তটি দারুন ভয়ঙ্কর আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয় ভ্রমণকারীদের। তবে স্থানীয় দর্শণার্থীরা ভ্রমণ করতে পারলেও দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে নিরাপত্তা বিবোচনায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় দেবতাখুমের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেনা পর্যটকরা। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ফেব্রুয়ারীর প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের সময়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট দেবতাকুম খুলে দেবার ইঙ্গিত দিলেন স্থানীয় প্রশাসন।
দেবতাখুমের নৌকা চালক অংসিং মারমা বলেন, দেবতাখুম সমিতির তত্বাবধানে ভ্রমণকারী পর্যটকদের নৌকা ও বাশেঁর ভেলা চালিয়ে দেবতাখুম ঘুরিয়ে দেখান। মাসশেষে ৫ হাজার টাকার মত খরচ পান। ভ্রমণকারী পর্যটকরাও খুশী হয়ে বখশিশ করতেন। এটা তার বাড়তি আয়, ফলে পারিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ছিল। দীর্ঘদিন যাবৎ দেবতাখুম ভ্রমণে স্থানীয় প্রশাসনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় অর্থনৈতিকভাবে পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কেটেছে। তবে দেবতাখুম খুলে দেয়ায় ভীড় করছে পর্যটকরা। এখন বাড়তি উপার্জনে পরিবারে আবার স্বচ্ছতা ফিরবে।
দেবতাখুম স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিজয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দেবতাখুম পর্যটন স্পট ঘিরে পাড়ার শতাধিক বাসিন্দারের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। পাড়ার লোকজন সমিতির তত্বাবধানে পর্যটকদের নিরাপত্তা, গাইড সেবা, লাইফ জ্যাকেট সেবা, খাবারের ব্যবস্থা করা’সহ সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাড়তি উপার্জন করে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে দেবতাখুম পর্যটন স্পটে।
দেবতাখুম পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুচোমং মারমা বলেন, দেবতাখুম ভ্রমণে পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় ভীষণ খুশী পাড়াবাসী। খুলে দেয়ায় নতুন করে রাস্তাঘাট এবং নৌকা বাঁশের ভেলা ঠিকঠাক করা হয়েছে আবার। এই পর্যটন স্পটের জন্য ৫২ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি এবং ৯৬ জন পর্যটক গাইড রয়েছেন। একইসঙ্গে দেবতাখুম এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে নতুন বাঁশের ভেলা ৫০টি ও ৫টি নৌকা পর্যটকদের জন্য নামানো হয়েছে।
প্রশাসনের তথ্যমতে, রোয়াংছড়ি উপজেলার কচ্ছপতলী বাজার থেকে ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েই দেবতাকুম যেতে হয়। একেকজন গাউড ১০ জনের পর্যটকের নেতৃত্ব দিতে পারেন প্রশাসনের নিয়মে। কচ্ছপতলী সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্ত লিপিবদ্ধ করতে হয়। কচ্ছপতলী বাজার হতে ব্রীজের নীচে তারাছা খালের রাস্তা হয়ে পায়ে হেঁটে ঘন্টা দেড়েক পথ পাড়ি দিতে দেবতাখুম পৌছাতে। তবে কচ্ছপতলী আর্মী ক্যাম্পের পাশ্ববর্তী নতুন রাম্তা দিয়ে গাড়ীতে বা পায়ে হেঁটেও দেবতাখুমের পাশ্ববর্তী পাড়ায় পৌছানো যায়। এতে সময় কিছুটা কম লাগলেও সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হবেন খাল পথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের।
এ বিষয়ে বান্দরবানে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, নিরাপত্তা বিবোচনায় বন্ধ থাকা রোয়াংছড়ি উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্পট দেবতাখুম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে রুমা, থানচি তিনটি উপজেলায় আজও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তবে পর্যটন শিল্প হচ্ছে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। পর্যটনের সঙ্গে এখানকার কৃষি, হস্তশিল্প, কোমর তাঁত, পরিবহন’সহ সবকিছু জড়িত। তাই পর্যটনের উন্নয়নে প্রশাসন’সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও একসঙ্গে কাজ করে। পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় নিরাপত্তা
গতবছরের এপ্রিলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটায় ভালো। আইনশৃংখলা বাহিনীও পর্যটন খুলে দেবার বিষয়ে সম্মত। পরিস্থিতি বিবোচনায় বন্ধ থাকা অন্য পর্যটন স্পটগুলোও খুলে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ভ্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বন্ধ থাকা অন্যান্য স্থানগুলোও খুলে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Previous Articleআগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বর্ধিত সভা
Next Article প্রেমিক গোয়েন্দা, স্বামী খলনায়ক!
Related Posts
Add A Comment
