।। নিজস্ব প্রতিবেদক, ৪ এপ্রিল ২০২৫।।
বান্দরবানে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে পাহাড়ের বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা। ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে জেলার দর্শণীয় পর্যটন ম্পটগুলো। জেলা শহরের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে কোথাও রুম খালি না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে পর্যটকেরা। চাপ সামলাতে রাত্রী যাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুলে দেয়া হয় জেলা স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নও।
সরজমিন ঘুরে দেখাগেছে, জেলা সদরের দর্শণীয় পর্যটন স্পট
নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, চিম্বুক, ডাবল হেন্ডস ভিউ, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, বুড্ডিস্ট ট্যাম্পল’সহ দর্শণীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের উপচে পড়ে ভীড়। কোথাও যেন তিল ধারণের মত ঠাঁই নেই পর্যটকদের পদচারণায়। প্রকৃতির কাছাকাছি নির্মল ছায়ায় ঘুরে বেড়াতে অনেকেই ছুটে গেছেন রহস্যময় দর্শণীয় স্থান দেবতাখুম’সহ দূরদূরান্তের পাহাড়-পর্বতে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি সাদিয়া সুলতানা এ সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, বাচ্চাদের স্কুলকলেজ ও নিজেদের অফিস বন্ধ থাকায় মূলত ঈদের ছুটি কাটাতেই পরিবার নিয়ে বান্দরবান ঘুরতে এসেছি। এখানের চোখ জোড়ানো পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ। মোটামুটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মত। তবে বেড়াতে অনেকেই হোটেলে থাকার রুম না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে দেখলাম। এ বিষয়টি নজরে প্রশাসন’সহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্কতা মূলক প্রচারণা দরকার। যাতে পর্যটকরা হুট করে ছুটে এসে ভোগান্তিতে না পড়ে।
নারায়ণগঞ্জের পর্যটক টিমের দলনেতা সাব্বির, সায়েদুল
অভিযোগ করে বলেন, আগেও কয়েকবার বান্দরবান ভ্রমণে এসেছিলাম, কিন্তু কখনো এতটা চাপ দেখিনি, হোটেলে রুম পেতেও সমস্যা হয়নি। তাই এলাকা থেকে শিশু, নারী-পুরুষ মিলে ৪৭ জনের টিম নিয়ে দুদিনের জন্য বান্দরবান বেড়াতে এসেছিলাম, কিন্তু এবার কোথাও ফাঁকা নেই রুম, বাধ্য হয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নে রাত্রিযাপন করতে পেরেছি। স্থানীয় প্রশাসন’সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি পর্যটক বান্ধব আচরণের জন্য।
এদিকে ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ’সহ আইনশৃংখলা বাহিনী এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে আবাসিক হোটেল, মোটেল রিসোর্ট, পরিবহন এবং রেষ্টুরেন্ট মালিক-শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
জেলা হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার এবং সর্বাত্মক সেবার মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ সম্মলিতভাবে কাজ করছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ভাবেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে নিয়োজিত শ্রমিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অগ্রীম বুকিং না করে বেড়াতে আসা কিছু পর্যটক হোটেলে রুম না পেয়ে সাময়িক ভোগান্তিতে পড়েছে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তারপরও প্রশাসন এবং হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তবে সুপার পিক আওয়ার গুলোতে রুম বুকিং ছাড়া বান্দরবান ভ্রমণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অপার সম্ভাবনাময় পাহাড় কন্যাখ্যাত বান্দরবান জেলায় রয়েছে চোখ জুড়ানো সব সৌন্দর্য। লেকের উপরে আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু, অসংখ্য ঝর্ণা ধারা, রহস্যে ঘেরা দেবতাখুম, আলীর সুরঙ্গের মতন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়াও প্রকৃতি এবং শৈল্পিক ছোয়ায় সাজানো দর্শণীয় স্থান নীলাচল, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, ডিম পাহাড়, মেঘলা, প্রান্তিকলেক, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দির, রামাজাদী, গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, শৈলপ্রপাত, পাহাড়ের ভিতরে তৈরি টার্নেল’সহ দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটন স্পট।
এদিকে প্রতিবছরের মত এবারও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড় জমেছে বান্দরবান। ইতিমধ্যে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা সদরের হোটেলগুলোতে কোনো রুম ফাঁকা ছিলনা। অধিকাংশ রিসোর্টে আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত সবগুলো রুম বুকিং রয়েছে।
হোটেল গার্ডেন সিটির স্বত্বাধিকারীরা জাফর উল্লাহ ও হোটেল ডি’মোরের অপারেশন ম্যানেজা হ্যাপী মারমা বলেন, কয়েকদিন কোনো রুমই ফাঁকা ছিল আমাদের। তবে শনিবার থেকে পর্যটকদের চাপ কমে আসবে। দীর্ঘ কয়েকবছর পর ঈদে পর্যটকদের এমন সাড়া মিলেছে বান্দরবান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন আবারও।
জেলা টুরিস্ট পুলিশ কর্মকর্তা সৈকত কুমার রায় বলেন, টানা ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আগমন ঘটেছে। বাড়তি চাপ সামলাতে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জেলা টুরিস্ট পুলিশ’সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা কাজ করে যাচ্ছেন। দর্শণীয় স্থানগুলোতে টহলের পাশাপাশি পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত দিয়েও সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটন জেলা বান্দরবান। হোটেল,মোটেল রিসোর্টগুলোও পরিপূর্ণ থাকায় পর্যটকদের সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়ন পর্যন্ত খুলে দেয়া হয়েছিল। ঈদের লম্বা ছুটিতে বান্দরবান ভ্রমণে আগাম রুম বুকিং নিশ্চিত করে বেড়াতে আসার জন্য পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’সহ সংশ্লিষ্টরা সম্মিলিত ভাবেই কাজ করেছে।
Related Posts
Add A Comment
