।। নিজস্ব প্রতিবেদক,২১ এপ্রিল ২০২৫।।
বান্দরবানের থানচিতে দেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমার বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মী (এএ) উৎসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য খামলাই ম্রো এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিরোধী এ কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত১৬ এপ্রিল থানচি উপজেলার রেমাক্রী বাজারে মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসবের আয়োজন করে উদযাপন কমিটি। উৎসবে মিয়ানমার বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মী (এএ) সদস্যরা বাহিনীর পোষাক পড়ে অংশ নেয় উৎসবে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য ও থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো এবং গত৫আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের পর পলাতক থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের দূর্ণীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই, অংপ্রু’সহ আরও কয়েকজন।
এ ঘটনায় উৎসবের ছবি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে সর্বত্র। ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে দেশ জুড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতার্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এটি কোনো ছোটখাটো বিষয় বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এ ঘটনাটি রাষ্ট্রদোহিতার সামিল৷ দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরুপ৷ অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে পুন:গঠিত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো সম্পৃক্ত থাকার ছবি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রিয় এবং দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত থানচি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিল এবং ঐসময়ে জেলা বিএনপির কমিটিতে সদস্য ছিল। এছাড়াও সম্প্রতি বাতিল হওয়া
জেলা মৎস্যজীবি দলের সহসভাপতির পদে ছিলেন। অপরদিকে সদ্য ঘোষিত জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সম্প্রসারিত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে অন্তভূক্ত হবার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং থানচি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খামলাই ম্রো বলেন, বিএনপির বর্তমান কোনো কমিটিতে আমি নেই। সাবেক কয়েকটি কমিটিতে ছিলাম। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত রেমাক্রী বাজারে সাংগ্রাই উৎসবটি আয়োজন করেছিল উৎসব উদযাপন কমিটি। আমি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম, ঘটনাস্থলে যাবার পর দেখলাম উৎসবে আরাকান আর্মী এবং আওয়ামীলীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীরাও রয়েছে। কিন্তু সবকিছু দেখেও ফিরে আসার সুযোগটা ছিলোনা সামাজিক উৎসব হওয়ায়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক অধ্যাপক ওসমান গনি ও মুজিবুর রশীদ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু আহবায়কের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে কোনো কথা হয়নি। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা জানা নেই।
অপরদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মী (এএ) সাংগ্রাই উৎসবে অংশনেয়ার ছবি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী। আইনশৃংখলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে থানচিতে ২২টি ইঞ্জিন বোটে করে সাঙ্গু নদীপথে আরাকান আর্মী এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম জানান, পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। ঘটনাস্থল’সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো ধরনের মামলা হয়নি।
তবে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএম ইমরুল হাসান জানিয়েছেন, ওই উৎসবে আরাকান আর্মির কোন সশস্ত্র সদস্যরা ছিলনা। যারা ছিলেন তারা সহযোগী বা সমর্থক। স্থানীয়দের সাথে উৎসবে অংশ নিয়েছিল। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর পর বিজিবি কঠোরভাবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে কোনো আরাকান আর্মির সদস্য নেই বলে জানিয়েছেন বিজিবির উর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।
বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে যোগসাজশের অভিযোগ, দেশের অভ্যন্তরে সাংগ্রাই উৎসবে আরাকান আর্মীর উপস্থিতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি
Previous Articleএকুশ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স এলো উনিশ দিনে
Related Posts
Add A Comment
